ডিজিটাল মার্কেটিং

ফেসবুক মার্কেটিং কি? কম খরচে ফেসবুক মার্কেটিংয়ের আদ্যোপান্ত

Less than a minute to read
avatar
সুন্নাহ আইটি ইন্সটিটিউট
facebook marketing guidelines
ফেসবুক মার্কেটিং

যেকোনো ব্যবসার সফলতা লুকিয়ে থাকে প্রোডাক্টের মার্কেটিং এর মাঝে। যে প্রোডাক্টের যত বেশি মার্কেটিং হবে সে প্রোডাক্টের তত বেশি প্রচার-প্রসার ও বিক্রি হবে। বর্তমান এই যুগে মার্কেটিং ছাড়া কোন প্রোডাক্টের সফলতার কথা চিন্তাও করা যায়। আর সেটি যদি হয় ফেসবুক মার্কেটিং তাহলে তো আর কথা নেই, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের রিপোর্ট অনুযায়ী পৃথীবিতে ৩.০৩ বিলিয়ন মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ফলে এই বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীর সোশ্যাল মিডিয়াকে ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টর থেকে বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এনালগ মার্কেটিং বনাম ডিজিটাল মার্কেটিং

এক সময় মার্কেটিং এর কথা আমাদের মাথায় আসলেই সাথে সাথে আমাদের মাথায় আসতো দেয়াল ভরা পোস্টার, লিফলে্‌ট, টিভিতে অনবরত অ্যাড, রেডিওতে কিছুক্ষণ পরপর প্রোডাক্টের প্রচার, কিছুক্ষণ পর পর বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে করে যাওয়া মাইকে করে পণ্যের বিজ্ঞাপনের কথা। 

সময়ের বিবর্তনে সেই দিনগুলো এখন হারিয়ে গেছে। এখন সবকিছুই যখন ডিজিটাল হচ্ছে মার্কেটিংটা কেন এনালগ থাকবে। এই এনালগ মার্কেটিং এর জায়গায় এখন চলে এসেছে ডিজিটাল মার্কেটিং, এখনো পোস্টার বা লিফলেট দেখা যায় তবে সেটা ওয়েবসাইটের দেয়ালে, এখন টিভিতে যতটা না অ্যাড চলে তার থেকে বেশি এড চলে ইউটিউব ও ফেসবুকের ভিডিওতে। 

এখন আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে মানুষ ডিজিটাল মার্কেটিং বেছে নিচ্ছে কেন!

বেছে নেবে নাইবা কেন, মানুষ এখন যতটা সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয় তার সামান্য সময়ও এখন টিভি সেটে বা রেডিওতে দেয় না। মানুষ এখন অনলাইনে কেনাকাটা তে অভ্যস্ত হচ্ছে এবং বাজারে গিয়ে পোস্টার দেখে জিনিসপত্র কেনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

ফেসবুক মার্কেটিং কি?

ফেসবুক মার্কেটিং হল, ফেসবুকের অডিয়েন্স কে কাজে লাগিয়ে কোন প্রোডাক্টের মার্কেটিং করা। ফেসবুক মার্কেটিং করতে মূলত ফেসবুক পেজ, ভিডিও ,ফটো ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। পুরো পৃথিবীতে ফেসবুকে ব্যভারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩.০৩  বিলিয়ন, এবং শুধুমাত্র বাংলাদেশই আছে প্রায় ৪৯.৩১ মিলিয়ন ইউজার (এপ্রিল মাসের তথ্যমতে) এর থেকে বোঝা যাচ্ছে আমাদের দেশেই কত বড় মার্কেটপ্লেস রয়েছে ফেসবুক মার্কেটিং এর জন্য। আর এখন মানুষ ফেসবুকে এত বেশি অ্যাডিক্টেড যে,হিসেব করলে দেখা যাবে প্রায় প্রত্যেকেই প্রতিদিন ফেসবুকে এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় ব্যয় করে । এ থেকে বোঝা যায়,এত বিশাল মার্কেটপ্লেসে আমরা সহজেই অনেক বেশি প্রচার প্রসার এবং সেল জেনারেট করতে পারবো।

ফেইসবুক মার্কেটিং করতে কি প্রয়োজন?

ফেসবুক মার্কেটিং কোন রকেট সাইন্স না, এটা জানার জন্য কোন পিএইচডি ডিগ্রিও করতেও হয় না। ফেসবুক মার্কেটিং করতে গেলে আপনাকে কিছু টিপস এন্ড ট্রিকস সম্পর্কে জানতে হবে। যার মাধ্যমে আপনি সহজেই ফেসবুক মার্কেটিং করতে পারবেন।

যেহেতু আপনি এই ব্লগটা এতদূর পড়েছেন তার মানে আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন যে আপনি ফেইসবুক মার্কেটিং করবেন, চলুন ফেসবুকে মার্কেটিং সম্পকে আরো বিস্তারিত আলোচনা করি। 

ফেসবুকে মার্কেটিং করার জন্য সর্বপ্রথম দরকার হবে একটি  মার্কেটিং রোড ম্যাপ। আপনি কিসের মার্কেটিং করবেন, কিভাবে মার্কেটিং করবেন, মার্কেটিং এর ব্যয় কেমন হবে ইত্যাদি, এমন একটি খসড়া ম্যাপ তৈরি করে নিতে হবে।

এতক্ষণে নিশ্চয় আপনার  মার্কেটিং রোডম্যাপ রেডি তাহলে এখন কি করবেন?

এরপর দরকার হবে একটি ফেসবুক পেজের। ফেসবুক মার্কেটিং করতে পেজের কোন বিকল্প নেই, তাই এখন আপনার করনীয় হচ্ছে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস রিলেটেড নাম দিয়ে কোন একটি বিজনেস পেজ খোলা। অনেকেই বলতে পারে ফেসবুক প্রোফাইল দিয়ে কি মার্কেটিং করা সম্ভব নয় ,হ্যাঁ সম্ভব তবে আপনি খুব একটা সুবিধা করতে পারবেন না এবং বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতেও পারবেন না। 

এবার আপনার ফেসবুক পেজটিতে আকর্ষণীয় কভার ফটো, প্রোফাইল ফটো যুক্ত করুন।

এরপর আপনার পণ্য বা সেবা সম্পকিত টেক্সট, ছবি, অডিও, এবং ভিডিও কনটেন্ট নিয়মিত পোস্ট করা শুরু করুন। আর আপনি যদি ফেইসবুক মার্কেটিং করে অতি দ্রুত ফলাফল পেতে চান তাহলে টাকা খরচ করে পেইড  মার্কেটিং করতে হবে ।

ফেসবুক মার্কেটিং এর প্রকারভেদ

Facebook Marketing কে সাধারণত ২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমনঃ

  1. ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং
  2. পেইড ফেসবুক মার্কেটিং
ফ্রি ও পেইড ফেসবুক মার্কেটিং এর পার্থক্য

১। ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং

কোনো রকম টাকা পয়সা খরচ করা ছাড়াই ফেসবুক ব্যবহার করে যে কোনো পণ্যের বা সেবা প্রচার ও প্রচারণা করারকেই ফ্রি ফেইসবুক মার্কেটিং বলে। মনে করুন আপনার খুব সুন্দর একটি ফেসবুক পেজ আছে, আপনি সেখানে নিয়মিত পোস্ট করেন, আপনার অনেক ফলোয়ার, অনেকেই আপনার পোস্ট পড়ে, তাদের মতামত জানায়, অনেকেই আপনাকে বিশ্বাস করে, আপনি মাঝে মাঝে ফেসবুক লাইভে যান, আপনার শেয়ার করা ভিডিওতে ভিউ হয় অনেক, এখন আপনি যদি কোন একটা পণ্য বিক্রি করা শুরু করেন তাহলে দেখবেন আপনার পরিচিতদের মধ্যেই অনেকেই আপনার পণ্য কিনছে। এই যে আপনি প্রোডাক্ট বিক্রি করলেন আপনার পরিচিতি কে কাজে লাগিয়ে, আপনাকে এক্সট্রা করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে কোন টাকা দিতে হলো না কোন অ্যাডভার্টাইজমেন্ট শো করাতে হলো না এটাই ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং। 

২। পেইড ফেসবুক মার্কেটিং

অন্যদিকে, টাকার বিনিময়ে ফেসবুক এড ক্যাম্পেইন করে আপনার পণ্য বা সেবা নির্দিষ্ট ফেসবুক ব্যবহারকারর নিকট প্রচার করার মাধ্যমকেই পেইড ফেসবুক মার্কেটিং বলে। ফ্রী ফেসবুক মার্কেটিং এ যাদের কাজ হচ্ছে না, তাদের জন্যই মূলত পেইড ফেইসবুক মার্কেটিং। পেইড মেথডে আপনার মার্কেটিং এর দায়িত্ব ফেসবুক নিজে নিয়ে নেবে, আপনি যাদেরকে এড দেখাতে চান যখন দেখাতে চান, যেভাবে দেখাতে চান, সবকিছু নিজের মত করে করতে পারবেন, এর জন্য আপনাকে কিছু টাকা খরচ করতে হবে। তবে সঠিকভাবে অ্যাড রান করাতে পারলে আপনার প্রোডাক্ট বিক্রির মাধ্যমে এডের খরচের কয়েক গুণ বেশি লাভ করা সম্ভব। 

ফ্রি ও পেইড ফেসবুক মার্কেটিং এর পার্থক্য

ফ্রি মেথড পেইড মেথড
টাকা লাগে না টাকা লাগে
বেশী লোকের কাছে পৌঁছানো যায় নাঅনেক বেশী লোকের কাছে পৌঁছানো যায়
প্রতিদিন অনেক বেশী সময় ব্যয় করতে হয়খুব বেশি সময় ব্যয় করতে হয় না
অর্গানিক ট্রাফিক পাওয়া যায় অর্গানিক ট্রাফিক পাওয়া যায় না 
নিজস্ব  পরিচিত জনদের মধ্যে প্রচার লাভ করেটার্গেট করে এড দেখানো যায় 

পেইড ফেসবুক মার্কেটিং এর পদ্ধতি

যখনই আমরা ফেসবুক পেজে অ্যাড রান করতে যাব। ইউজার এর কাছে পৌঁছানোর জন্য ৬টি অপশন আমরা দেখতে পারবোঃ

১. Awarness: অ্যাওয়ারনেস ব্যবহার করা হয় পোস্ট রিচ করার জন্য, ব্রান্ডের প্রচার প্রসারের জন্য, ভিডিও এর ভিউ বানানোর জন্য, দোকানের লোকেশন জানানোর জন্য ।

২. Traffic : ট্রাফিক ব্যবহার করা হয়  মূলত ওয়েবসাইটে ভিজিটর আনার জন্য, ল্যান্ডিং পেইজ দেখানোর জন্য, লিংকে ক্লিক করানোর জন্য ।

৩. Engagement: এনগেজমেন্ট মূলত ব্যবহার করা হয় প্রোডাক্টের সাথে গ্রাহকের পরিচিতি তৈরি করার জন্য ।

৪.Leads:  লিডস মূলত ব্যবহার করা হয় কাস্টমারের তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য ,যা করা হয় ইনস্ট্যান্ট ফর্ম এর মাধ্যমে ।

৫. Sales : যারা নিয়মিত অনলাইন থেকে পণ্য কিনে বা কাঙ্খিত পণ্য খুঁজে তাদেরকে এড দেখানোর জন্য সেলস ব্যবহার করা হয় ।

৬. App Promotion: বিভিন্ন প্রকার এপের প্রচার প্রচারণা চালানোর জন্য  অ্যাপ প্রমোশন ব্যবহার করা হয়।

আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ফেসবুক মার্কেটিং করে কি করতে চাচ্ছেন তার ওপর ভিত্তি করে উপরের ৬টি অপশন থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। এরপর আপনার পণ্য বা সেবা সম্পকিত কনটেন্ট, ছবি, ও কীওয়ার্ড যুক্ত করতে হবে। এরপর আপনি কত টাকার বিনিময়ে কত দিন বিজ্ঞাপন দিতে চান সেটি পূরন করতে হবে। এরপর বিজ্ঞাপনটি কোন স্থানের, কোন বয়সি, এবং কোন পেশার মানুষদের দেখাতে চান সেটি পূরন করতে হবে। এরপর সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার বিজ্ঞাপনটি চালু করতে পারেন।

কম খরচে ফেসবুক ফেসবুক মার্কেটিং

কম খরচে পেইড ফেসবুক মার্কেটিং করতে হলে,প্রথমত আমাকে বুঝতে হবে আমি কাদের কাছে আমার পণ্যটি বিক্রি করতে চাই, মনে করুন আমি পুরুষদের হাত ঘড়ি তৈরি করি এখন আমার প্রধান টার্গেট মূলত হওয়া উচিত অফিসগামী কর্পোরেট পুরুষরা বা কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা আবার আমাকে ভাবতে হবে এই অফিসগামী পুরুষেরা বা কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা কখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজ করতে অভ্যস্ত। সাধারণত অফিসগামী পুরুষেরা বা কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা সন্ধ্যা থেকে রাতের দিকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজ করে, তাহলে আমি যদি সন্ধ্যা থেকে রাতের দিকে এড পরিচালনা করি তাহলে আমার ট্রাফিক জেনারেট করা ও সেলস বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেশি।

এখন আমি ওই একই পণ্যের জন্য যদি ছোট, বড়, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ সকলের কাছে সারাদিন এড পরিচালনা করতে থাকি তাহলে কিন্তু আমার অ্যাড পরিচালনার খরচ অনেক গুণে বৃদ্ধি পাবে, ফলে আমার ব্যবসায়িক সাফল্যের হার লাভের দিকে না গিয়ে লসের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ কারণেই পেইড মার্কেটিং এর সময় আমাদের টার্গেটেড অডিয়েন্সের দিকে ফোকাস দিতে হবে। তাহলেই কম খরচে পেইড মার্কেটিং করা সম্ভব। 

ফেসবুক মার্কেটিং শিখে লাভ কি?

প্রথমত ফেসবুক মার্কেটিং আমরা শিখব নিজেদের ব্র্যান্ডকে প্রমোট করার জন্য, নিজেদের ব্যবসা সোশ্যাল মিডিয়ায় শিফট করার জন্য, আরও বেশি ট্রাফিক জেনারেট করার জন্য। এছাড়াও বর্তমান পৃথিবীতে ছোট বড় প্রায় প্রতিটি কোম্পানি এখন ফেইসবুক মার্কেটিং এর সঙ্গে অভ্যস্ত যদি আমরা ফেসবুক মার্কেটিং এ এক্সপার্ট হতে পারি তাহলে আমরা সহজেই যে কোন কোম্পানিতে ডিজিটাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে জব পেতে পারি। তাছাড়া  ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে প্রচুর কাজ রয়েছে ফলে কেউ ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট হলে তার ঘরে বসে থেকে আয় করার সুযোগ রয়েছে।

ফেসবুক মার্কেটিং শিখবেন কিভাবে ?

পৃথিবীতে কোন বিষয়ই কেউ মায়ের পেট থেকে শিখে আসে না, সবাইকে শিখতে হয়। ডিজিটাল মার্কেটিং ফ্রিতে শেখার জন্য আপনি চাইলে ইউটিউবের সাহায্য নিতে পারেন, কিন্তু আপনি যদি অনলাইন ব্যাসিক টার্ম গুলোর সাথে একটু কম পরিচিত থাকেন, আপনি যদি মনে করেন আপনার একজন মেন্টর আপনাকে গাইড করলে আপনার জন্য শেখা সহজ হবে, অথবা আপনি যদি হাতে কলমে শিখতে চান তাহলে আপনি আমাদের ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স এ ভর্তি হতে পারেন।

শেষ কথা

বর্তমানে গোটা পৃথিবী ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ফলে ব্যবসা ,চাকুরি, কর্মক্ষেত্র সবকিছুই এখন ডিজিটাল মিডিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এ সময়ে ফেসবুক মার্কেটিং শেখা আপনার ক্যারিয়া্রের জন্য একটা বাড়তি পজেটিভ পয়েন্ট যোগ করবে, যা বাকিদের থেকে আপনাকে এগিয়ে রাখবে। সর্বোপরি নিজের ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি, ও অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে আয় করতে Facebook Marketing শিখার কোনো বিকল্প নেই। 


avatar
সুন্নাহ আইটি ইন্সটিটিউট