ব্যবসা, ব্র্যান্ডিং এমনকি ব্যক্তিগত পোর্টফোলিওর জন্য ওয়েবসাইট এখন খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো- ওয়েবসাইট বানাতে গেলে কোডিং জানা লাগে। এ কারণে অনেকের ওয়েবসাইট তৈরির ইচ্ছা থাকলেও শুধুমাত্র কোডিং না জানার কারণে নিজের একটু ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন না
কিন্তু সুখবর হলো আপনি বর্তমান সময়ে খুব সহজে কোডিং না জেনেও নিজের একটু ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলতে পারবেন। এখন অনেকগুলো Low Code Website Builder মার্কেটে চলে এসেছে। যা ব্যবহার করে যা আপনি নিজের ওয়েবসাইট নিজেই তৈরি করে ফেলতে পারবেন।
এই আর্টিকেলটিতে আমরা একদম শুরু থেকে বুঝবো Low Code Website Builder আসলে কী, কিভাবে কাজ করে, আর কেনই বা এটি ব্যবহার করবেন!
Low Code Website Builder কি?
সহজভাবে বললে, Low Code Website Builder হলো এমন একটি টুল যেখানে ওয়েবসাইট বানাতে অনেক কম কোডিং করতে হয়, এবং ক্ষেত্রবিশেষে একেবারেই কোড করতে হয় না । ওয়েবসাইট ডিজাইনের প্রায় সমস্ত কাজই সম্পন্ন হয় ভিজুয়াল এডিটরের মাধ্যমে।
মানে আপনি ওয়েবসাইট বানাবেন ড্র্যাগ & ড্রপ সিস্টেম দিয়ে। যেমন ছবি টেনে আনলেন, টেক্সট যোগ করলেন, বাটন বসালেন। এভাবেই আপনি আপনার পুরো ওয়েবসাইট টি তৈরি করে ফেলবেন সব হয়ে গেল।
Low Code Website vs No Code Website
অনেক সময় Low Code আর No Code এ দুটো জিনিস আপনাকে কনফিউশনে ফেলতে পারে। চলুন সহজভাবে জেনে নেই, দুটো আসলে কী এবং এদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়।
No Code: এখানে কোনো কোডিংয়ের ঝামেলা নেই। আপনি শুধু ড্র্যাগ-ড্রপ করে বা রেডি ব্লক ব্যবহার করে ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন। এক কথায় একদম সহজ! (উদাহরণ: Framer, Wix, Droip)
Low Code: এখানে বেশিরভাগ কাজ কোড ছাড়াই করা যায়। তবে যদি আপনি কিছু ইউনিক বা কাস্টম ফিচার যোগ করতে চান, তখন সামান্য কোড ব্যবহার করতে হবে। মানে এটা হলো একটু বেশি ফ্লেক্সিবল অপশন। (উদাহরণ: Webflow, WordPress with Elementor)
সহজভাবে বললে, No Code মানে হলো কোড ছাড়া দ্রুত কিছু তৈরি করা, আর Low Code মানে হলো চাইলে কোড দিয়ে সেটাকে আরও কাস্টমাইজ করা।
তাই আপনি যদি শুধু দ্রুত একটা ওয়েবসাইট বানাতে চান, তবে No Code যথেষ্ট। আর যদি ওয়েবসাইটে নিজের মতো করে নতুন কিছু যোগ করতে চান, তবে Low Code Website ই হবে সেরা পছন্দ।
Low Code Website Builder কিভাবে কাজ করে?
Low Code Website Builder আসলে অনেকটাই LEGO খেলনার মতো। আপনার সামনে ব্লক বা কম্পোনেন্ট দেওয়া থাকবে, সেগুলো মিলিয়ে মিশিয়ে আপনি নিজের ওয়েবসাইট বানাবেন। এখানে কোনো জটিল কোড লিখতে হয় না। সবকিছু হয় ভিজ্যুয়াল এডিটরের মাধ্যমে। আপনি চাইলে টেক্সট, ছবি বা বাটনের মতো বিভিন্ন এলিমেন্টস শুধু টেনে এনে যেখানে খুশি বসিয়ে দিতে পারবেন। এর পাশাপাশি আগে থেকে তৈরি করা টেমপ্লেট ও থিম ব্যবহার করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটা প্রফেশনাল লুকিং ওয়েবসাইট বানানো সম্ভব।
আপনার ওয়েবসাইটে যদি কনট্যাক্ট ফর্ম, স্লাইডার বা গ্যালারির মতো কম্পোনেন্ট দরকার হয় তাহলেও খুব সহজে এটি যুক্ত করতে পারবেন । এখানেই শেষ নয়, এই ধরনের টুলে ব্যাকএন্ড ইন্টিগ্রেশনও থাকে, ফলে অনলাইন পেমেন্ট, ডাটাবেজ বা বিভিন্ন সার্ভিসের সাথে ওয়েবসাইট কানেক্টও করা যায়। যদিও বিষয়গুলো এডভান্স তবে আপনি যদি কোন একজন ওয়েবসাইটে ডেভেলপার কে হায়ার করেন তার জন্য বিষয়গুলো সহজ হবে।
আর যাদের কোডিং নিয়ে সামান্য ধারণা আছে তারা চাইলে CSS বা JavaScript দিয়ে ওয়েবসাইটটিকে আরও কাস্টমাইজ করতে পারছেনই ।
কেন Low Code Website Builder ব্যবহার করবেন?
মনে করুন, আপনার মাথায় একটি ব্যবসার আইডিয়া এলো, অনলাইনে শপ খুলবেন এবং নিজের সার্ভিসগুলো মানুষকে দেখাবেন। এখন আপনি চাইলে পুরো ওয়েবসাইট বানানোর জন্য একজন ওয়েব ডেভেলপার হায়ার করতে পারেন, অনেক সময় ও টাকা খরচ করে কোডিং করাতে পারেন। এতে কাজ হবে ঠিকই, কিন্তু সময় লাগবে অনেক।
এবার আসি Low Code Website Builder এ। এটা অনেকটা এরকম, আপনার কাছে সব উপকরণ আগেই সাজানো আছে। আপনাকে শুধু ব্লকগুলো (যেমন প্রোডাক্ট সেকশন, সার্ভিস সেকশন, কনট্যাক্ট ফর্ম ইত্যাদি) টেনে এনে বসাতে হবে, আর সামান্য কিছু পরিবর্তন করতে হবে। মানে, একদম শূন্য থেকে কোড লিখতে হবে না, আবার পুরোপুরি শুধু রেডিমেডও না। মাঝামাঝি একটা সহজ রাস্তা বলতে পারেন। ফলে আপনি নিজের আইডিয়া খুব দ্রুত ওয়েবসাইটে রূপ দিতে পারবেন।
আরেকটা বাড়তি সুবিধা হলো, Low Code Website Builder এর মধ্যে সবকিছু এত সহজভাবে সাজানো থাকে যে আপনি চাইলে ওয়েবসাইটের লুক একদম নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করতে পারবেন। Color বদলানো, নতুন Section বা Feature যোগ করা কয়েক ক্লিকেই সম্ভব।
একবার ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেললে ছোটখাটো Update বা পরিবর্তনের জন্য আর বারবার ডেভেলপার খুঁজতে হবে না। কারণ বিষয়গুলো এতটাই সহজ যে আপনি নিজেই সবকিছু সামলাতে পারবেন।
সব মিলিয়ে, যারা দ্রুত এবং ঝামেলাহীনভাবে নিজের ওয়েবসাইট চালু করতে চান, তাদের জন্য এটা সত্যিই একরকম লাইফসেভার।
Low Code Website Builder এর সীমাবদ্ধতা
Low Code Website Builder – এর এতসব সুবিধার পাশাপাশি এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো জটিল বা একেবারে ইউনিক ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করতে গেলে এখানে লিমিটের মধ্যে আটকে যেতে হয়। সাধারণ ওয়েবসাইট বা ছোট ব্যবসার জন্য এটি চমৎকার কাজ করলেও, বড় কোনো প্রজেক্ট বা জটিল ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন বানাতে গেলে অনেক সময় কাস্টম কোড লিখতে হয়। এছাড়া কিছু টুলে ফ্লেক্সিবিলিটি কম থাকে, ফলে সবকিছু নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করা সম্ভব হয় না। আরেকটি বিষয় হলো- যদি ওয়েবসাইটের স্কেল খুব বড় হয়, তাহলে Low Code টুলগুলো সবসময় সেই লেভেলের পারফরম্যান্স দিতে পারে না। তাই বলা যায়, এই টুলগুলো নতুনদের জন্য এবং ছোট-মাঝারি প্রজেক্টের জন্য পারফেক্ট হলেও, অনেক বড় বা জটিল প্রজেক্টে এগুলো ব্যবহারে লিমিটেশন থেকেই যায়।
জনপ্রিয় Low Code Website Builder
বাজারে এত রকম Tool আছে যে নতুনদের জন্য কোনটা দিয়ে শুরু করবেন, সেটা নিয়ে অনেক সময় কনফিউশন হয়ে যায়। তাই কয়েকটা জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের নাম শেয়ার করছি যেগুলো দিয়ে শুরু করলে ঝামেলা কম হবে।
Wix হচ্ছে একেবারে বিগিনারদের ফেভারিট, কারণ এখানে সবকিছু চোখের সামনে সাজানো থাকে, শুধু ক্লিক করে কাজ করা যায়। একটু বেশি ডিজাইন কন্ট্রোল চাইলে Webflow দারুণ অপশন- এখানে ডিজাইনের খুঁটিনাটি নিয়ে খেলা করার স্বাধীনতা আছে। যারা ব্লগ, কোম্পানির ওয়েবসাইট বা ই-কমার্স সবকিছু একসাথে সামলাতে চান, তাদের জন্য WordPress বরাবরই সেরা, বিশেষ করে Elementor বা Divi এর মতো পেজ বিল্ডার ব্যবহার করলে। যদি কারও মাথায় ওয়েব অ্যাপ বানানোর আইডিয়া থাকে, তাহলে Bubble বেশ জনপ্রিয়।
কাদের জন্য Low Code Website Builder উপযুক্ত?
যারা দ্রুত ওয়েবসাইট চালু করতে চান, তাদের জন্য এটি খুবই উপযোগী।
যেমন ধরুন, ছোট ব্যবসার মালিকরা-যাদের দ্রুত একটা অনলাইন প্রেজেন্স দরকার, কিন্তু বড় বাজেট বা টেকনিক্যাল টিম নেই। আবার ফ্রিল্যান্সার বা উদ্যোক্তার কথা ভাবুন, যারা নিজেদের সার্ভিস বা প্রোডাক্ট এক ঝটকায় দেখাতে চান-তাদের জন্যও দারুণ কাজ করে। নতুন ডেভেলপার বা যারা ওয়েবসাইট নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে চান, তারাও এখানে সহজেই হাত পাকাতে পারেন। আর স্টার্টআপ ফাউন্ডারদের তো কথাই নেই-যখন কোনো আইডিয়া টেস্ট করতে হয়, তখন সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা না করে কয়েক ঘণ্টায় একটা ডেমো বা MVP বানিয়ে ফেলা যায়। মূলত যাদের কোনো আইডিয়া আছে আর সেটাকে ঝামেলা ছাড়াই অনলাইনে আনা দরকার, তাদের জন্য এটি একদম পারফেক্ট।

কিভাবে শুরু করবেন? (Step by Step Guide)
১. একটি প্ল্যাটফর্ম বেছে নিন (যেমন Wix, Webflow, WordPress)
২. একটি Template/Theme সিলেক্ট করুন
৩. নিজের কনটেন্ট (টেক্সট, ছবি, ভিডিও) যোগ করুন
৪. কাস্টমাইজেশন করুন – কালার, ফন্ট, লে-আউট পরিবর্তন করুন
৫. ডোমেইন এবং হোস্টিং কানেক্ট করুন
৬. Publish করে টেস্ট করুন – মোবাইল ও ডেস্কটপে ঠিকমতো কাজ করছে কিনা দেখুন, সবকিছু ঠিক থাকলে লাইভ করুন
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
Low Code টুলস গুলো দিন দিন আরও স্মার্ট হচ্ছে। এখন অনেকেই AI-powered Website Builder ব্যবহার করছে, যেখানে শুধু একটা টেক্সট প্রম্ট লিখলেই পুরো ওয়েবসাইট তৈরি হয়ে যায়। ভবিষ্যতে এটি আরও সহজ হবে, আর ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
সুতরাং, আজকের দিনে Low Code Website Builder হলো ওয়েবসাইট বানানোর সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী উপায়। আপনি হোন ছোট ব্যবসার মালিক, একজন Freelancer, বা একেবারেই নতুন- এই টুলগুলো দিয়ে অনায়াসে নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।
সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো – ডিজাইন আর টেকনিক্যাল স্কিলের ঝামেলা ছাড়াই স্বপ্নের ওয়েবসাইট তৈরি সম্ভব।
তাই যদি এখনো আপনার কোনো ওয়েবসাইট না থাকে, আজ থেকেই Low Code Website Builder দিয়ে চেষ্টা শুরু করে দিন। আপনার যদি বেসিক কম্পিউটার বিষয়গুলো নিয়ে আইডিয়া না থাকে তাহলে সুন্নাহ আইটি ইনস্টিটিউটের বেসিক কম্পিউটারের কোর্সটি করে ফেলতে পারেন।